মুহাঃ মোশাররফ হোসেন: স্বয়নে স্বপনে যে দিকে তাকাই না কেন শুধু রাসেল ভাইপার আর রাসেল ভাইপার এর আতঙ্কে সারা বাংলাদেশ ছেয়ে গেছে জনসাধারণের মাঝে। আর জনগণের মধ্যে আতঙ্কের একটাই নাম রাসেল, ভাইপার আর রাসেল’ ভাইপার নিয়ে যেভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে দেশের সব জেলায় জেলায় রাসেল’ ভাইপার কিলবিল কিলবিল করছে! অতি উৎসাহের প্রচারণায় একটা মেকি আতঙ্ক তৈরি হয়েছে! এখন মাছরাঙা কিংবা মাইট্টা সাপের মত বিষহীন সাপকেও ভয় লাগছে! বাইম মাছ কিংবা কুঁচিয়ার মধ্যেও রাসেল’ ভাইপারের ছায়া! প্রচারণা এতো প্রবল যে স্বপ্নে-জাগরণে কেবল রাসেল’ ভাইপার! চন্দ্রবোড়া বিষয়ক সত্য-মিথ্যা মিশ্রিত সংবাদ যে হারে প্রচার ও শেয়ার হচ্ছে তাতে আতঙ্কিত না হয়ে উপায় নাই। গুজব সত্যের চেয়ে বেশি বেগে চলে!
বাঙালি কোন সাপ দেখেছে আর সেটাকে পিটিয়ে না মেরে ক্ষান্ত হয়েছে- এ ঘটনা এখনো প্রায় বিরল। রাসেল’ ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যা ছড়ানো হচ্ছে তার অধিকাংশ ভূয়া তত্ত্ব। পথেঘাটে কিংবা ক্ষেতখামারে কৃষক চোখ বুঝে হাঁটে না! এই অপপ্রচার দ্বারা শখের কৃষকের কৃষিকাজ বন্ধ হবে। তাতে কার লাভ কে জানে! সাপ আতঙ্কে গাও গেরামের কৃষাণী আর শাকপাতা তুলতে বাগানে-ক্ষেতে যাবে না!
ছবি: রাসেলস ভাইপার সাপ
আমরা সাপকে বেশি ভয় পাচ্ছি অথছ এই সাপ কে সৃষ্টি করল তাকে কি একবারের জন্যও ভয় পাচ্ছি? প্রশ্ন হলো সৃষ্টিকে ভয় না করে শ্রষ্টাকে ভয় করলে ক্ষতি কি? আমরা সৃষ্টির সেরা জীব অর্থাৎ আঠার হাজার মাখলুকাতের ভিতর শ্রেষ্ট এই মানবজাতি, মানবজাতির উপরে কেহ নয়! আপনি সৃষ্টি কর্তাকে বিশ্বাস করুন এবং কুরানের আদেশ নিষেধ মেনে চলুন, সাথে চোখ কান খোলা রাখুন দেখবেন সব সমাস্যার সমাধান তিনিই করবেন ইনশাল্লাহ। আল্লাহ রোগ দিয়েছে তার ঔষধও দিয়েছে, যেমন ডাক্তার সৃষ্টি করেছে শ্রষ্টা, রোগ হলে যেমন ঔষধও দিয়েছেন।
রাসেল’ ভাইপার নিঃসন্দেহে বিষধর সাপ তবে বাংলাদেশে এন্টিভেনম আছে এবং সাপও নিধন হচ্ছে। রাসেল’ ভাইপার কামড় দিলে নিশ্চিত মৃত্যু এটা সত্য নয়। চন্দ্রবোড়ার নাম সেই ছোটকাল থেকে শুনি। বেজি এবং গুইসাপ আমরাই হত্যা করে সাপের বংশ বাড়াতে সুযোগ দিয়েছি। তবে দেশে প্রতিবছর মশার কামড়ে যে সংখ্যক মানুষ মারা যায় তার মাত্র ৩% মানুষ মারা যায় সব সাপের ছোঁবলে। আতঙ্কিত না হয়ে অপপ্রচারকে নিরুৎসাহিত করি।
কাউকে যেকোন ধরনের সাপে কাটলে ওঝা এবং বৈদ্যের কাছে না নিয়ে যথা দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিলে দূর্ঘটনার মাত্রা কমে আসবে। অসচেতনতার কালে মানুষ জা’ত সাপের দংশনেও মারা যেতো। কাজেই হুজুগে কৃষি এবং কৃষক যেনো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। রাসেল’ ভাইপার বিষয়ে সচেতনতা মূলক প্রচারণা হোক। অপপ্রচারে আতঙ্ক ছড়ায়।
বাস্তুসংস্থানে কে কখন উড়ে এসে জুড়ে বসবে তা মানুষের সৃষ্টি! প্রকৃতির গতিপথ বিঘ্নিত করলেই মানুষের হারিয়ে যেতে যা যা লাগবে তা হাজির হবে। সচেতন হই তবে সমাধান মিলবে। নাক চোখ খোলা রেখে চললে রাসেল’ ভাইপার কারো ক্ষতির কারণ হবে না বরং খুনীই খুন হবে।
শ্রষ্টাকে মানুন এবং মনে প্রানে আত্মবিশ্বাস রাখুন। মনে যত ভয় রাখবেন, ভয় তত আপনাকে বশ করবে। আসুন আমরা সবাই মিলে এই মিথ্যাচার গুযব বন্ধ করি। এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার-অপপ্রচার যতদিন চলবে ততদিন এখান সেখান থেকে প্রচুর রাসেল’ ভাইপার আবিস্কার হবে! কেউ কেউ কেঁচোর মধ্যেও রাসেল ভাইপার খুঁজে পাবে। আতঙ্কিত নয়, সচেতন হোন, শ্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস রাখুন।
Leave a Reply