এস.এম.জয় বগুড়া:
বগুড়ায় পরীক্ষার হলে এক পরীক্ষার্থীর পারিবারিক দ্বন্দ্বে খাতা গায়েবসহ বহিস্কারের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজে স্নাতক চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা চলাকালে এ- ঘটনা ঘটে।
ওই শিক্ষকের নাম আবু রায়হান৷ তিনি ওই কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া তিনি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার শিকতা গ্রামে বাসিন্দা।
জানা গেছে, বৃ্হস্পতিবার দুপুরে স্নাতক চতুর্থ বর্ষের পরীক্ষা ছিল। সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের ২০১ নং কক্ষে পরীক্ষা দিচ্ছিলেন কামরুন নাহার নামের এক শিক্ষার্থী। কামরুন নাহান সরকারি আজিজুল হক কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং তাঁর বাড়ি জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার শিকতা গ্রামে। ওই কক্ষে পরীক্ষার ডিউটিতে ছিলেন একই গ্রামের শিক্ষক আবু রায়হান। ওই শিক্ষকের সাথে ওই শিক্ষার্থীদের পরিবারের পারিবারিক দ্বন্দ্ব রয়েছে।
শিক্ষার্থী কামরুন নাহার বলেন, ‘ পিছনে তাকানোর কারণে পরীক্ষা শুরু হওয়ার ৪৫ মিনিট পর আবু রায়হান স্যার আমার খাতা কেড়ে নেয়৷ আমি ৩০ মিনিট পর স্যারের কাছে খাতা ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করি। পরে তিনি আমাকে সামনে ডেকে নেন। সামনে ডেকে নিয়ে আমাকে পরিবারের বিষয়ে কিছু জানো কিনা জিজ্ঞাসা করেন৷ এর সাথে আমাকে বলে তোমার বাবা জয়নাল তো আমার ভাইদের মেরেছে। তোমার বাবাকে এখুনি আমার ভাইদের কাছে ক্ষমা চাইতে বলো। নইলে তোমার খাতা গায়েব করে দিবো অথবা বহিস্কার করে দিবো। এছাড়াও আগামী ৫ বছর যাতে পরীক্ষা না দিতে পারো সেই ব্যবস্থা করবো।’
কামরুন নাহার আরও বলেন, আমার স্বামীও অর্থনীতি বিভাগ থেকে ওই কলেজে পরীক্ষা দিচ্ছিল। তারও আমার মত একই অবস্থা করবে বলে হুমকি দেন আবু রায়হান স্যার। পরে দেড় ঘণ্টা পর তিনি আমার খাতা দেন। আমি এখন ওই বিষয়ে পাস করা নিয়ে চিন্তাই আছি। আমরা এই ঘটনায় দুই কলেজের প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে অভিযোগ দিবো। আমরা এর বিচার চাই।’
কামরুন নাহারের স্বামী আব্দুল্লাহ বলেন, ‘৪১৫ নম্বর কক্ষে পরীক্ষা শেষ করে বাইরে বের হই। এসময় আবু রায়হান স্যারের সাথে দেখা হয়৷ তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন পরীক্ষা কেমন দিচ্ছো। আমি তাঁকে জানাই ভালোই হচ্ছে। এই শুনে ওই স্যার আমাকে বলেন, এর পর থেকে কিভাবে ভালো পরীক্ষা দাও সেটা দেখে নিবো।’
কামরুন নাহারের সামনে বসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরীক্ষার্থী বলেন, ‘পিছনে তাকানোর অপরাধে কামরুন নাহারের খাতা কেড়ে নেয়েছিল আবু রায়হান স্যার। দেড় ঘন্টা খাতা নিয়ে রেখেছিল। পরে কামরুন নাহারকে অনেক ক্ষণ সামনে ডেকে নিয়ে কথা বলে৷ তবে কি কথা বলে তা জানিনা। আর ওইদিন এক শিক্ষার্থী শুধু নকল করছিল তাকে আবু রায়হান স্যার বের করে দিয়েছিল। আর কামরুন নাহার ছাড়া অন্য কারও খাতা নেন নি। ‘
এদিকে, অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে শিক্ষক আবু রায়হান মুঠোফোনে বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থী পিছনে দেখে লিখছিল। তাই খাতা কেড়ে নিয়েছিলাম। ওই শিক্ষার্থীর বাবা আমার ভাইদের মেরেছিল। তবে ওই ঘটনায় তার খাতা নেইনি। এর বেশি কিছু জানতে চাইলে কলেজে আসুন।’
এ- বিষয়ে সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক রেজাউন নবী বলেন, ‘পরীক্ষা চলাকালে ২০১ নং কক্ষে আমাদের শিক্ষক আবু রায়হান সংক্রান্ত ঘটনা মৌখিকভাবে জেনেছি। আমরা লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবো।’
Leave a Reply