আর এ লায়ন সরকার নরসিংদী প্রতিনিধি:
রেল কর্তৃপক্ষকে অবগত করেই নাকি এসব জমি দখল করা হচ্ছে। আবার লিজ নিয়ে স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে বলেও বড় গলায় দাবি করছেন অনেকে।
দফায় দফায় জমি থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও নরসিংদীর স্থানীয় প্রভাবশালীদের কাছে অসহায় বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। রেলের জমি দখলের এ উৎসবে মেতেছেন নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন পুলিশ ফাঁড়ির পিছনে স্টেশন বটতলা, রেলওয়ে কলোনি নরসিংদী,বিলাসদী শাপলা ভাগদী মাকাজ, নতুন বাসস্ট্যান্ড মোড়,(শালিধা) সদর উপজেলার মাধবদী, পলাশ ও রায়পুরার প্রভাবশালীরা।
সরেজমিনের ঘুরে দেখা গেছে, নরসিংদী সদর থেকে নারায়ণগঞ্জ বন্দরে চলাচলের সাবেক রেল সড়ক অংশে স্থাপনা নির্মাণ করার জন্য জমি নিয়ে চলছে কারবার। আরশিনগর হইতে বটতলা,বিলাসদী পর্যন্ত, রেলওয়ে সম্পত্তি খোলা স্ট্যাম্পে বিক্রির হিড়িক, আবার কোথাও কোথাও পজিশন বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত।
সাবেক এ রেল সড়কটির রেল চলাচলের অংশে জনসাধরণের চলাচলের সুবিধার্থে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের আওতায় সড়ক নির্মাণ করা হয়। এতে যান চলাচলের সুবিধা বেড়ে যাওয়ায় সড়কের দুই পাশে বাড়ছে স্থাপনা।
সদর উপজেলার মাধবদীর আব্দুল্লাহ বাজার, খরমর্দী, কোতালীর চর, বিলপাড় শান্তির বাজার, খড়িয়া বাজারে রেলওয়ের পরিত্যক্ত জমিগুলো মনগড়া চুক্তি করে বদলানো হচ্ছে মালিকানা। জমিগুলোতে স্থায়ী পাকা স্থাপনা নির্মাণ করে আগাম দখলে নেয়ার উৎসবে মেতেছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
রেল কর্তৃপক্ষকে অবগত করেই নাকি এসব জমি দখল করা হচ্ছে। আবার লিজ নিয়ে স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে বলেও বড় গলায় দাবি করছেন অনেকে।
ইতোমধ্যে অনেক স্থায়ী স্থাপনা দৃশ্যমান হয়েছে সাবেক এই রেল লাইনের পাশে। এর মধ্যে রেলওয়ে স্টেশনের নিরাপত্তার স্বার্থে দুই দিকে গ্রিল দেওয়ার ফলে দখলের উৎস বেড়ে যায়, কেউ বলছে পচা’মূলে আবার কেউ বলছেন মৎস্য এবং কৃষি লিজ এনেছি। সড়কের পাশে রেলের জমিতে আধাপাকা ঘর নির্মাণের নামে কৌশলে রড ও সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে পাকা করে স্থায়ীভাবে মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। আরশিনগর হইতে দক্ষিণ পাশে রেলের ডোবা জমিতে বালু ফেলে জমি দখল করা হয়েছে। তবে এ জমির মালিক কে- বলতে পারেননি স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের জমিতে গড়ে ওঠা মার্কেটের এক ভাড়াটিয়া জানান, তিনি দুই শাটার-সম্বলিত একটি দোকান বছরে ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে ভাড়া নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘ভাড়ার চুক্তিতে লেখা আছে, যে কোন সময় রেলের জমিতে নির্মাণ করা আধাপাকা দোকানগুলো ভাঙ্গা পড়তে। তাই সবসময় আতঙ্কে থাকতে হয় আমাদের। নরসিংদী রেল স্টেশন এলাকায় বিশেষ করে আরশিনগর, রেলওয়ে ওভারব্রিজ এলাকায় কৃষি লিজ এনে পুকুর, বাগান, মাটি ভরাট করে বানিজ্য ভাবে পাকা করে মার্কেট করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এডভান্স নিয়ে বছর চুক্তিতে ভাড়া অথবা পজিশন বিক্রি করছেন খোলা স্ট্যাম্পে।
রেলের জমি ভোগদখলে থাকা সূত্রে নিজেকে মালিক দাবি করা একজন জানান, সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়ে স্থাপনা তৈরি করেছেন তিনি। এখানে অবৈধ বলার কোনো সুযোগ নেই।
এ ছাড়া এই রেল সড়কের পাশে সরকারি জমিগুলো ক্রয় সূত্রেও মালিক দাবি করেন একাধিক ব্যক্তি। নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন ফাঁড়ির পিছনে ফরিদ মোল্লা নামের স্থানীয় ব্যক্তি কৃষি লিজ জমি এনে বাণিজ্যিকভাবে মার্কেট করে মোটা অংকের টাকা এডভান্স নিয়ে দোকান ভাড়া দিচ্ছেন, পুলিশ ফাঁড়ির পিছনে প্ল্যাটফর্ম গেছে প্রায় ১০ শতাংশ জমি পুনরায় সাইড ওয়াল নির্মাণ করে মার্কেট করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সাংবাদিকরা সরজমিনে গেলে দেখতে পান উক্ত জমিতে পুরাতন কাঁঠাল এবং অন্যান্য ফলাফলাদির গাছ কেটে ফেলে উক্ত জায়গায় সাইট ওয়াল ও টয়লেটের জন্য টাংকি নির্মাণ করছেন। উপস্থিত সাংবাদিকদের কে দেখে ফরিদ ভাগিনা মোল্লার ভাগিনা সাজ্জাদ জানান উনার মামা জায়গাটি কৃষি লিজ এনে এনেছেন, তবে বাণিজ্যিক কোন লিজ নেই। একটি তথ্যসূত্র মতে জানা যায় উক্ত জায়গায় বাণিজ্যিক মার্কেট নির্মাণ করে মোটা অংকের অ্যাডভান্স নিয়ে দোকান ভাড়া দেওয়ার পায়তারা করছে।
নরসিংদীর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার এটিএম মুসা বলেন, কৃষি লিজ এনে বাণিজ্যিকভাবে মার্কেট করা বা ইমারত নির্মাণ করা দণ্ডনীয় অপরাধ,তবে সড়ক আইনে যে কোনো সড়কের পাশে কোনো প্রকার স্থাপনা নির্মাণ দণ্ডনীয় অপরাধ।
এ বিশ্বের নরসিংদী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ শহিদুল্লাহর সাথে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, রেলওয়ে কতৃপক্ষ আমাদেরকে অবহিত করলে বা নির্দেশ দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব।
রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর নরসিংদী জেলার মোরশেদ জানান রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আমাদেরকে যে নির্দেশনা দিবেন আমরা সেভাবে কাজ করব, তবে এটা রেলওয়ে স্টেট এর জায়গা
আপনারা তাদের সাথে যোগাযোগ করেন আরো তথ্য জানতে পারবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মচারী বলেন, ‘রেলের জমিগুলো মূলত জোর করে দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা। রেলের জমিতে কেউ লিজ নিলেও স্থায়ী পাকা ভবন করতে পারবেন না। অস্থায়ী স্থাপনা করতে পারবেন। যেমন কৃষি জমিকে চাষ করতে পারবে, নালা-ডোবায় মৎস চাষ করতে পারবেন। তবে কোনো ব্যক্তি বসবাস ও বাণিজ্যিক কাজ করার জন্য স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করতে পারবেন না।’
তবে লিজ দেয়া জমি থেকে রেল কর্তৃপক্ষ প্রয়োজন মনে করলে যে কোনো সময় তাকে সরিয়ে দিতে পারবেন বলে জানান এ কর্মচারী।
এদিকে নরসিংদীতে দফায় দফায় রেলওয়ের জমি বেদখলমুক্ত ও স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান করা পরও বন্ধ হয়নি রেলওয়ের জমি দখল। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরের ব্যবস্থা নেয়া অতি জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয় সুশীল সমাজ।
Leave a Reply