কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে কাগজে-কলমে ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ২ শতাংশ। ভোট শেষে বুধবার বিকাল ৫টায় জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু আনসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় প্রায় ১৭ শতাংশ ভোট পোল হয়েছে। তবে বাস্তবে মাঠের চিত্র ভিন্ন। অধিকাংশ কেন্দ্রেই ছিল না ভোটারের উপস্থিতি। ঘন্টার পর ঘন্টা কক্ষে বসে থেকেও ভোটারের দেখা পায়নি সহকারি প্রিজাইডিং কর্মকর্তারা। ভোট চলাকালীন অনেক সহকারি প্রিজাইডিং অফিসার ও প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট ভোট কক্ষের মধ্যেই টেবিলে মাথা রেখে অথবা চেয়ারে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। আবার ভোটার না থাকায় ভোট কেন্দ্রর মধ্যে আনসার সদস্যদের রান্না করে বনভোজন করতে দেখা গেছে। সারাদিন বসে বসে অলস সময় পার করেছেন আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাও।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভোট শুরুর পর থেকে সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আড়াই ঘণ্টায় পাটিকাবাড়ী ইউনিয়নের ৪৯ নম্বর মাজিলা সরকারি বালক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৯ নম্বর বুথে কোনো ভোট পোল হয়নি। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার রাকিব উদ্দিন জানান, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৮৮০। আড়াই ঘণ্টায় এখানে ৩ দশমিক ৮৩ শতাংশ ভোট পড়েছে। তবে ৯ নম্বর বুথে এই সময়ে একটি ভোটও পোল হয়নি। এই বুথে মোট ভোটার ৪১০ জন। কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি একেবারেই কম। সকালে কুষ্টিয়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কলেজ কেন্দ্রে প্রথম এক ঘণ্টায় চারটি ভোট পোল হয়। এরমধ্যে একটি ভোট দিয়েছেন আনারস প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা। আতা বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপির চাচাতো ভাই। আর নির্বাচনী প্রচারের শেষ দিনে হামলায় আহত একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মোটরসাইকেল প্রতীকের আবু আহাদ আল মামুনের কোনো এজেন্টকে ভোট কেন্দ্রে দেখা যায়নি।
বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা বলেন, রাতে বৃষ্টি হয়েছে, এ কারণে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে। তবে ভিন্ন কথা বলেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবু আহাদ আল মামুন। তিনি বলেন, একজন প্রার্থীর ওপর যদি হামলা হয়, তাহলে সাধারণ ভোটাররা কোনো সাহসে ভোট কেন্দ্রে যাবে।
সকালের দিকে ভোটার উপস্থিতি একেবারে কম থাকলেও সময় বাড়ার সঙ্গে ভোটারের উপস্থিতি বাড়বে বলে ধারণা করেছিলেন নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে সারাদিনে ভোটার উপস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। এদিকে ভোট কেন্দ্রে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে স্থানীয় পৌরসভার কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মীর রেজাউল ইসলাম বাবু (৫৫) সহ ৩ জনকে আটক করে পুলিশ। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলার চৌড়হাস মুকুল সংঘ কেন্দ্র থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক মীর রেজাউল ইসলাম বাবু কুষ্টিয়ার সদর পৌরসভার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। এ ছাড়া তিনি পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতার সমর্থক। চৌড়হাস মুকুল সংঘ কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার এম এস মাসুদুজ্জামান জানান, স্থানীয় কাউন্সিল রেজাউল ইসলামের নেতৃত্বে তার সমর্থকেরা ভোট কেন্দ্রের বাইরে মূল ফটকের সামনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ও হট্টগোল করছিলেন। এতে সাধারণ ভোটারদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আইন-শৃঙ্খলায় নিয়োজিত স্ট্রাইকিং ফোর্স তাকে আটক করে। কুষ্টিয়া জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু আনসার কাউন্সিলর রেজাউল ইসলামকে আটকের বিষয় নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, আটক কাউন্সিলরকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত পরে জানানো হবে। অন্যদিকে খোকসা উপজেলায় জমজমাট ভোট হয়েছে। এখানে ভোটারের উপস্থিতিও ভালো ছিল। সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবু আনসার জানান, খোকসা উপজেলায় প্রায় ৫০ শতাংশ ভোট পোল হয়েছে। এখানে চেয়ারম্যান পদে তিনজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী থাকায় তুলনামূলক ভোটার উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে।
Leave a Reply