বিনোদন প্রতিবেদক
বাংলা চলচ্চিত্রের একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনূর। প্রয়াত নির্মাতা এহতেশামুর রহমান পরিচালিত ‘চাদঁনী রাতে’ সিনেমার মধ্য দিয়ে অভিনয়ে পথচলা শুরু করেন তিনি। প্রয়াত নায়ক সালমান শাহের সঙ্গে ‘তুমি আমার’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘তোমাকে চাই’, ‘সুজন সখী’সহ ১৪টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন শাবনূর। এই জুটির প্রায় প্রতিটি সিনেমাটি ছিল দর্শকপ্রিয়তা শীর্ষে।
অভিনয় ক্যারিয়ারের তিন দশক পূর্ণ করেছেন চিত্রনায়িকা শাবনূর। দীর্ঘ এই পথচলায় তিনি স্মরণ করেছেন অভিনয়ের প্রথম দিনগুলোর কথা। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এই শিল্পের মানুষজন ও তার ভক্ত-দর্শকদের প্রতি।
শাবনূরের কথায়, ‘সবার ভালোবাসায় চলচ্চিত্র জীবনের পথচলায় তিন দশক পার করে দিলাম, আলহামদুলিল্লাহ। স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রয়াত এহতেশাম দাদুর ‘চাঁদনী রাতে’ সিনেমার মাধ্যমে ১৯৯৩ সালের ১৫ অক্টোবর আমার চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয়েছিল। প্রথম এই সিনেমায় আমার সহশিল্পী ছিলেন নায়ক সাব্বির। আমার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে অনেক গুণী পরিচালকের সিনেমাতে কাজ করার সুযোগ হয়েছে।
তিন দশকে দর্শকের ভালোবাসার পাশাপাশি শাবনূর পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার। এই অভিনেত্রীর ভাষ্য, মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত ‘দুই নয়নের আলো’ (২০০৬) সিনেমাটি আমাকে এনে দিয়েছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সম্মান। তারকা জরিপে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র অভিনেত্রী বিভাগে ১০ বার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছি। এ ছাড়া তিনবার বাচসাস পুরস্কার লাভ করি।
নিজের ব্যবসাসফল সিনেমাগুলোর কথা স্মরণ করে শাবনূর বলেন, প্রবল দর্শক চাহিদার জন্য প্রযোজক-পরিচালকেরা আমাকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণে অত্যন্ত আগ্রহী হওয়ায় আমার পক্ষে ১৫৮টি সিনেমার বিশাল মাইলফলক ছোঁয়া সম্ভব হয়েছে। যেসব চলচ্চিত্রে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি, তার মধ্যে ব্যবসাসফল ও দর্শক-সমালোচক জরিপে অন্যতম সেরা সিনেমাগুলো হলো-স্বপ্নের ঠিকানা, স্বপ্নের পৃথিবী, স্বপ্নের নায়ক, তোমাকে চাই, তুমি আমার, আনন্দ অশ্রু, প্রেম পিয়াসী, সুজন সখী, জীবন সংসার, মহামিলন, বিক্ষোভ, চাওয়া থেকে পাওয়া, বিচার হবে, দুই নয়নের আলো, নিরন্তর, মোল্লা বাড়ির বউ, বিয়ের ফুল, নারীর মন, শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ, নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি, সুন্দরী বধূ, ফুল নেব না অশ্রু নেব, প্রেমের তাজমহল, পৃথিবী তোমার আমার, কাজের মেয়ে, বস্তির মেয়ে, মধুর মিলন, বুক ভরা ভালোবাসা, স্বপ্নের বাসর, ও প্রিয়া তুমি কোথায়, স্বপ্নের ভালোবাসা, তোমার জন্য পাগল, চার সতিনের ঘর, আমার স্বপ্ন তুমি, আমার প্রাণের স্বামী, এক টাকার বউ, তুমি শুধু তুমি, কঠিন প্রেম, ঢাকাইয়া পোলা বরিশালের মাইয়া, স্বামী স্ত্রীর যুদ্ধ প্রভৃতি। আসলে আমার অভিনীত প্রতিটি সিনেমাই আমার কাছে প্রিয়।
তিন দশকের ক্যারিয়ারে অনেক নায়কের সঙ্গে পর্দা ভাগ করেছেন শাবনূর। এর মধ্যে প্রয়াত নায়ক সালমান শাহর সঙ্গে জুটিকে বিশেষভাবে উল্লেখ করে অভিনেত্রী বলেন, সহশিল্পীদের মধ্যে প্রয়াত সালমান শাহর সঙ্গে আমার জুটি ছিল সব থেকে বেশি দর্শকপ্রিয়। সালমানের অকালমৃত্যুর আগ পর্যন্ত মাত্র চার বছরে আমি ও সালমান সর্বাধিক ১৪টি দর্শকনন্দিত ও ব্যবসাসফল সিনেমাতে জুটি বেঁধে কাজ করেছিলাম। আমার চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে আরও যেসব সহশিল্পীর অবদান অনেক বেশি রয়েছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- প্রয়াত মান্না ভাই, ওমর সানী, বাপ্পারাজ, আমিন খান, অমিত হাসান, রিয়াজ আহমেদ, ফেরদৌস আহমেদ, শাকিল খান, শাকিব খান প্রমুখ।
চলচ্চিত্রের দর্শক থেকে নেপথ্যের কারিগর- সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শাবনূর। তার কথায়, আল্লাহর রহমত ও সবার দোয়ায় চলচ্চিত্রে এখনো যথেষ্ট সম্মান নিয়েই বেঁচে আছি। আমার অভিনয় জীবনের দীর্ঘ ৩০ বছরের পথচলায় চলচ্চিত্রের সব প্রযোজক, পরিচালক, সহশিল্পী, চিত্রনাট্যকার, নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী, ক্যামেরাম্যান এবং সিনেমার সঙ্গে জড়িত কলাকুশলীসহ সবার কাছে আমি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ ও ঋণী। বিশেষ করে আমার সিনেমার দর্শক ও অগণিত ভক্তের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা ও সমর্থনে আমি আজকের শাবনূর।
সবশেষে সবার প্রতি শুভকামনা জানিয়ে এই অভিনেত্রী বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় যুক্ত হওয়ার পর থেকে সর্বক্ষণ উপলব্ধি করছি আমাকে নিয়ে তাদের ভালোবাসা আজও বদলায়নি বরং বেড়েই চলেছে। আমার প্রতি আপনাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা ভবিষ্যতেও আশা করি অব্যাহত থাকবে। আমি সাংবাদিক ভাই-বোনদের প্রতিও বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। আমার প্রতি আপনারা প্রায় সবাই যেভাবে সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে আমাকে এত দূর এগিয়ে নিয়ে আসতে সাহায্য করেছেন, তার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আজকের এই বিশেষ দিনে রইল সবার প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা, সবার প্রতি অনেক শুভকামনা।
Leave a Reply