নিউজ ডেস্ক
ঘুষ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির চেয়ারম্যান বব মেনেনডেজ পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। মেনেনডেজ ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে।
যুক্তরাষ্ট্র সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির শীর্ষ সদস্য ডেমক্র্যাটিক দলীয় সিনেটার বব মেনেনডেজ সেই ব্যক্তি যিনি রিপাবলিকান দলীয় সেনেটার টড ইয়াং এর নেতৃত্বাধীন সিনেটের আটজন সদস্য নিয়ে বাংলাদেশের র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)- এর সিনিয়র কমান্ডারদের উপর নিষেধাজ্ঞা জারির জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাদের অভিযোগ ২০১৫ সাল থেকে র্যাব (RAB) ৪০০’র ও বেশি লোককে বিচার-বহির্ভূত ভাবে হত্যা করেছে।
সে সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানুচিনের কাছে লেখা চিঠিতে সিনেটাররা প্রশাসনের প্রতি এই আহ্বান জানান যে তাঁরা যেন RAB এর সিনিয়র কমান্ডারদের লক্ষ্য করে প্রযোজ্য আইনের অধীনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন।
এবার নিজেই অভিযুক্ত হলেন ঘুষ কেলেঙ্কারিতে। প্রশ্ন উঠছে, তবে কী র্যাবের বিষয়েও কোনো গোষ্ঠীর কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা নিয়ে ওই দাবি তুলেছিলেন মেনেনডেজ?
কিন্তু এতকিছুর পরেও বব মেনেনডেজ সিনেট কমিটির প্রধানের পদ ছাড়লেও সিনেটর পদ থেকে পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন মেনেনডেজ। শুরুতে মেনেনডেজ তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন “আমি কোথাও যাচ্ছি না।”
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের কৌঁসুলিদের অভিযোগ, মেনেনডেজ ও তাঁর স্ত্রী নাডিনে আর্সলানিয়ান মিসর সরকারের সহায়তা পাইয়ে দেওয়ার বিনিময়ে কয়েক হাজার ডলারের ঘুষ নিয়েছিলেন।
এর আগে ২০১৫ সালেও সিনেটের বৈদেশিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটি থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল মেনেনডেজকে। ওই সময় ফ্লোরিডার এক চক্ষুচিকিৎসকের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তখন সাময়িক সময়ের জন্য কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেন মেরিল্যান্ডের ডেমোক্র্যাট সিনেটর বেন কার্ডিন। এখন মেনেনডেজ ও নাদিনে দম্পতির বিরুদ্ধে নিউ জার্সির তিন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ঘুষ হিসেবে নগদ অর্থ, সোনা, দামি গাড়ি ও একটি বাড়ির বন্ধকের জন্য ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ সামনে এসেছে।
কৌঁসুলিদের অভিযোগ, মেনেনডেজ ও তাঁর স্ত্রী গোপনে প্রভাব খাটিয়ে মিসরীয় সরকারকে সহায়তা এবং তিন ব্যক্তিকে আর্থিক সুবিধা দিতে ঘুষ নিয়েছিলেন। অবমুক্ত করা ৩৯ পাতার অভিযোগে বলা হয়েছে, মেনেনডেজের রাজনৈতিক অবস্থান ও ক্ষমতা তাঁকে এ ধরনের দুর্নীতিতে জড়াতে উৎসাহিত করেছে। তবে মেনেনডেজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, এসব অভিযোগের পুরোটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
তবে অভিযোগের সপক্ষে কোনো দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারেননি মেনেনডেজ। পর্যবেক্ষকদের কারো কারো ধারণা, বৈদেশিক কমিটির চেয়ারম্যানের পদ ব্যবহার করে মেনেনডেজ সে সময়ের মার্কিন সরকারের প্রভাবশালীদের দিয়ে র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আদায় করে নিয়েছিলেন।
পর্যবেক্ষকরা আরও বলছেন, বব নিজের পদের প্রভাব খাটিয়ে মিশরীয় সরকারকে সহায়তায় দেয়া, কিংবা বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগ ওঠা ইঙ্গিত দেয়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও হয়তো কারো কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে থাকতে পারেন তিনি।
তবে মেনেনডেজ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের চূড়ান্ত ফয়সালা হবে আদালতেই। আইনি প্রক্রিয়ায় হয়তো বের হয়ে আসতে পারে থলের ভেতরে থাকা আরও অনেক অন্ধকারের বিড়াল
Leave a Reply