সালাহ্ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী
কুখ্যাত সাইবার সন্ত্রাসী এবং সুইডেনে পালিয়ে থাকা স্বঘোষিত নাস্তিক ও নৈরাজ্যবাদী তাসনিম খলিল তার সর্বশেষ পোষ্টে লিখেছে, “ঢাকার পুলিশ কমিশনার বলেছেন বিএনপি এবং আওয়ামী লীগকে ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান কর্মসূচী পালন করতে দেওয়া হবেনা। পুলিশের এই স্ট্র্যাটেজিটা আমি ঠিক বুঝলাম না। বিএনপির কয়েক লক্ষ লোক ঢাকার বাইরে থেকে গিয়েছে এবং এই মুহূর্তে ঢাকায় আছে। অবস্থান কর্মসূচী করে ওরা ঢাকা থেকে নিজেদের জেলায় ফিরে যেতো। এখন এই কয়েক লক্ষ লোক ঢাকাতেই থেকে যাবে? ওদের আসার পথে যেমন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছিলো, এখন বের হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও করা হবে? What really is the thinking here”.
শুধু ফেইসবুকে পোষ্ট দিয়েই ক্ষ্যান্ত হয়নি এই দুর্বৃত্ত। সে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, মানবাধিকার সংগঠন এবং গণমাধ্যমের কাছেও একই কথা বলে ক্রমাগত ইমেইল পাঠাচ্ছে, ফোন করছে। অথচ ২৮শে জুলাই বিএনপির সমাবেশ থেকে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর-সহ শীর্ষ সারির অনেক নেতা ঢাকায় আসা কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন ওনারা যেনো ঢাকায় থেকে যান এবং আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুতি নেন। দলটির নেতারা প্রকাশ্যে বলেছেন, যারা ঢাকায় এসেছেন তারা যেনো সরকারের পতন ঘটিয়ে নিজনিজ গন্তব্যে ফিরে যান।
তারমানে কি দাঁড়ালো? বিএনপির পক্ষ থেকে যেখানে ওদের ২৮শে জুলাই সমাবেশে যোগদানকারীদের ঢাকায় থেকে যেতে নির্দেশ দেয়া হলো, এখন তাহলে কেনো ওই দলের নীতিনির্ধারক-সহ ওদের পক্ষে কাজ করা অপপ্রচারকারীদের পক্ষ থেকে বিদেশিদের বলা হচ্ছে আওয়ামীলীগ সরকারের নির্দেশে পুলিশ তাদের কর্মীদের ঢাকায় আটকে রেখেছে? এসব মিথ্যাচার এবং অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দল এবং সরকারের পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে কিনা আমার জানা নেই।
অন্যদিকে আমেরিকায় বিএনপির প্রোপাগান্ডা ম্যাশিন মুশফিকুল ফজল আনসারী ও উইলিয়াম বি মাইলাম ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ করছে, মার্কিন ও পশ্চিমা আইনপ্রণেতাদের জনপ্রতি পঞ্চাশ হাজার থেকে তিন লাখ ডলার ঘুষ দিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চিঠি লেখাচ্ছে। জাতিসংঘের সদর দপ্তরেও একই কায়দায় ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেয়া বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের বহিষ্কারের তদবির করছে। অথচ বিএনপির মুশফিকুল ফজল আনসারী গত কয়েক বছর আগেই নিজেকে ঢাকার জাষ্ট নিউজ নামের একটা ওয়েব সাইটের মার্কিন প্রতিনিধি হিসেবে ভুঁয়া পরিচয় দিয়ে হোয়াইট হাউস ও জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড হাতিয়ে নিয়ে ওসব কার্ড ব্যবহার করেই আওয়ামীলীগ সরকারের বিরুদ্ধে ক্রমাগত অপপ্রচারে লিপ্ত রয়েছে।
যদিও বাংলাদেশে জাষ্ট নিউজ নামের কোনো নিউজ সাইট কিংবা সংবাদ মাধ্যমের কোনো অস্থিত্বই নেই। গত কয়েক বছর ধরেই আমি আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত ইংরেজী পত্রিকা ব্লিটজ-সহ বিদেশী পত্রিকাগুলোয় প্রকাশিত একাধিক নিবন্ধে বারবার এই মুশফিকুল ফজল আনসারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দিয়েছি। ওয়াশিংটন ও নিউ ইয়র্কে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনগুলোর প্রতি অনুরোধ রেখেছি ওরা যেনো আনসারীর এই ভুঁয়া পরিচয়ের বিষয়টা যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরে। কিন্তু আমার জানামতে আজ অব্দি কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি।
বিএনপি মাঠে অপতৎপরতা চালানোর পাশাপশি বিদেশে কোটিকোটি টাকা খরচ করে লবিং করছে। এমনকি ওরা দশ কোটি মার্কিন ডলার দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ছেলে হান্টার বাইডেনকে লবিইস্ট নিয়োগ দিয়েছে। আমার সম্পাদনায় প্রকাশিত ব্লিটজ পত্রিকায় আমরা ২০২১ সালেই বলেছি বিএনপি হান্টার বাইডেনকে বড় অংকের টাকা দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করার চেষ্টা করছে। সরকার যদি তখনই বিষয়টা আমলে নিয়ে এবিষয়ে তৎপর হতো তাহলে হান্টার বাইডেন বিএনপির পক্ষে অবস্থান নিতো না। এই হান্টার বাইডেনের প্রভাবের ফলেই চলতি বছর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি ব্লিংকেন বাংলাদেশের ওপর অন্যায়ভাবে নতুন ভিসানীতি চাপিয়েছে। বিএনপির প্রতি হান্টার বাইডেন এবং হিলারি ক্লিনটনের প্রকাশ্য পক্ষপাতিত্বের কারণেই ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ক্রমাগত এক্টিভিস্ট এর ভূমিকা পালনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকারকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টায় চালাচ্ছে।
বিএনপির নেতারা ২৮শে জুলাই সমাবেশে যা বললেন এর সারমর্ম হলো ওরা নির্বাচন চাননা। ওরা চান দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়ে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করতে। ওদের এমন ঘৃণ্য নীলনকশার ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশ শেষতক জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্যে পরিণত হবে। একারণেই বিএনপির এই ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়াটা এখন ভীষন জরুরী।
সালাহ্ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক, গবেষক, লেখক, কাউন্টার টেরোরিজম বিশেষজ্ঞ ও ইংরেজী পত্রিকা ব্লিটজ এর সম্পাদক।
Leave a Reply