বিনোদন প্রতিবেদক
চলচ্চিত্রের পর্দায় উপস্থিতি না থাকলেও বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রায়ই আলোচনায় থাকেন ঢাকাই সিনেমার নায়ক জায়েদ খান।
সবশেষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব উপস্থিতি তার। এর মধ্যেই শুক্রবার (২১ জুলাই) হঠাৎ করে “টক অব দ্য টাউনে” পরিণত হন জায়েদ খান।
বাংলাদেশের একাধিক গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করে, যুক্তরাষ্ট্রে “ইনস্টিটিউট অব পাবলিক পলিসি অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি রিসার্চ” এবং “হিউম্যানিটারিয়ান ফোকাস ফাউন্ডেশন” নামে দুটি সংস্থা যৌথভাবে সারা বিশ্ব থেকে ৪০ জন ব্যক্তিকে “দ্য হিউম্যানিটারিয়ান লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড” দিয়েছে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে সম্প্রীতি, শান্তি এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য কাজ করায় তাদের এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। জায়েদ খানও এই সম্মাননা প্রাপ্তদের মধ্যে একজন।
খবরটি ঢালিউডের এই অভিনেতা নিজেই তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করেন।
তিনি জানান, কোভিড -১৯ মহামারি চলাকালীন শিল্পীদের জন্য খাদ্য সহায়তাসহ তার বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রমের কারণে সংস্থাটি তাকে এই অ্যাওয়ার্ডের জন্য নির্বাচিত করেছে।
বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ডেলিগেটদের ডাইনিং রুমে এক অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে বলে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়। একইসঙ্গে এই অভিনেতাকে “গ্লোবাল পিস অ্যাম্বাসেডর” হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে বলেও বিভিন্ন প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের পর একটি নৈশভোজের আয়োজন করা হয়, যেখানে শুধুমাত্র জাতিসংঘের আমন্ত্রিত ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে ৪০ জন পুরস্কারপ্রাপ্ত ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত ছিলেন।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে এর সত্যতা যাচাই-বাছাই শুরু করে সমসাময়িক আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কাজ করা প্রভাবশালী ইংরেজি পত্রিকা ‘ব্লিটজ’। বিষয়টি জানতে জাতিসংঘ কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করে তারা।
জাতিসংঘের কাছে ই-মেইলের মাধ্যমে ব্লিটজ জানতে চায়, জায়েদ খানকে পুরস্কৃত করা “ইনস্টিটিউট অব পাবলিক পলিসি অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি রিসার্চ” তাদের অনুমোদিত সংস্থা কি-না।
জানা গেছে, কিছু পেশাদার ব্যক্তির উদ্যোগে ২০২২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর এই সংগঠনটির নামে একটি ডোমেইন কিনে পরে ওয়েবসাইট চালু করা হয়। যাত্রা শুরুর পর থেকেই বিপুলসংখ্যক মানুষকে “আজীবন সম্মাননা” পুরস্কার দিয়েছেন আয়োজকেরা। পুরস্কারের তালিকায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ অনেক বড় বড় ব্যক্তিও রয়েছেন। তবে এই পুরস্কারের বিষয়ে হোয়াইট হাউস থেকেও কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক পলিসি ও ডিপ্লোম্যাসি রিসার্চ নামের প্রতিষ্ঠানটির হেড অফিস নিউইয়র্কে অবস্থিত। হিউম্যান রাইটস রিচার্স অফিস সুইজারল্যান্ডে এবং কোঅর্ডিনেশন অফিস লুক্সেমবার্গে অবস্থিত। ইনস্টিটিউট অফ পাবলিক পলিসি ও ডিপ্লোম্যাসি রিসার্চ এর ওয়েবসাইটে https://ippdr.org তাদের ইভেন্ট অপশনে সম্মাননাপ্রাপ্ত ৪০ জনের নামসহ সংক্ষিপ্ত পরিচিতি ও সম্মানা প্রদানের কারন প্রকাশ করা হয়েছে। সংস্থাটির ওয়েবসাইটে কোথাও উল্লেখ করা হয়নি এর সাথে জাতিসংঘের কোন সম্পর্ক আছে। তবে সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানটির ভেন্যু হিসেবে জাতিসংঘের সদরদপ্তর, নিউইয়র্ক উল্লেখ করা হয়েছে।
২০২২ সালে ওয়েবসাইট চালু হলেও প্রতিষ্ঠানটি দাবি করে ২০১৭ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কার্লোস ম্যানুয়েল প্যারেজ গঞ্জালেস নামে এক ব্যক্তি এই প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট এবং ড. অ্যান্ড্রিজ বেস নামে আরেকজন এটির প্রতিষ্ঠাতা। আন্তর্জাতিক পরিচালক হিসেবে নাম উল্লেখ আছে ফ্রেডেরিক অর্ডিন্স নামে একজনের।
ব্লিটজ তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এমন প্রচুর সংস্থা রয়েছে যার বেশিরভাগই আফ্রো-আমেরিকানদের দ্বারা পরিচালিত। এসব সংস্থা নগদ অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন ব্যক্তিদের এই ধরনের পুরস্কার দিয়ে থাকে। নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতেই তারা জো বাইডেনের মতো বড় বড় ব্যক্তিদের নামও পুরস্কারের তালিকায় যুক্ত করেন। ওই আয়োজকরা জাতিসংঘের নিউ ইয়র্ক কার্যালয়ের অডিটোরিয়াম এক ঘণ্টার জন্যে ভাড়া করে ওই অনুষ্ঠান করে। সেখানে কোনো নৈশভোজ ছিলো না।
জায়েদ খান দাবী করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নাকি শুভেচ্ছা জানিয়ে বার্তা পাঠান। কিন্তু এবিষয়ে ব্লিটজ এর পক্ষ থেকে পত্রিকাটির মার্কিন সংবাদদাতা অনিতা মাথুর হোয়াইট হাউজে যোগাযোগ করলে সেখান থেকে বলা হয়, এধরনের কোনো শুভেচ্ছা বার্তা আমেরিকান প্রেসিডেন্ট দেননি।
Leave a Reply