নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের দুই কর্মচারী শাহজাহান ও গাফফারের দুর্নীতির কারণে কয়েক শতাধিক সিনেমা ও সিনেমার গান মুল প্রযোজকদের হাতছাড়া হয়েছে এমন অভিযোগ করেছেন প্রযোজক শেখ দিদার। সেই সাথে এই দুই কর্মচারীর দুর্নীতির কারণে অফিসের সম্মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে বলে এ নিয়ে অফিসের হিসাবরক্ষক মো. নুরুল ইসলাম সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর আবেদন করেন।
প্রযোজকরা অভিযোগে করেছেন এক শ্রেণির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা লেবেল কোম্পানির কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে সিডি-ডিভিডি ও ভবিষ্যতে উন্নত প্রযুক্তি সম্মিলিত এগ্রিমেন্টের কপির মাধ্যমে কপিরাইট সনদ দিয়ে থাকেন কপিরাইট অফিসের প্রধান সহকারী শাহজাহান ভুইয়া ও সহকারী প্রোগ্রামার আব্দুল গাফফার।
সম্প্রতি আবদুল গাফফার ও শাহজাহান নামে দুই কর্মকচারীর নামে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন দুই ভুক্তভোগী। তবে এবিষয়ে অভিযুক্ত ওই দু’জনের সাথে কথা বলতে চাইলে তারা কথা বলতে রাজি হননি।
অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, মাত্র ত্রিশ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করেন শাহজাহান। কিন্তু কয়েক বছরের ব্যবধানে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে কিনেছেন কোটি টাকা মূল্যের ফ্ল্যাট। ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র কিনেছেন ৩০ লাখ টাকার। কপিরাইট অফিসের প্রধান সহকারী শাহজাহান ভুইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ অবৈধভাবে কপিরাইট সনদ দিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। একই অভিযোগ সহকারী প্রোগ্রামার আব্দুল গাফফারের বিরুদ্ধেও। তিনি সাভারের কাউন্দিয়ায় তিনতলা বাড়ির মালিক হয়েছেন রয়েছে বিপুল সম্পত্তি।
আব্দুল গাফফার, দৈনিক ১২০ টাকা বেতনে পিওনের পদে চাকরি নেন কপিরাইট অফিসে। এরপর ২০১১ সালে কম্পিউটার অপারেটরের পদে স্থায়ী হন। এরপর থেকেই শুরু হয় নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্য। অফিসে আসা সেবা গ্রহীতার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে কয়েক বছরের ব্যবধানে নিজের নামে সাভারে বাড়ি ও সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
প্রযোজক শেখ দিদারুল ইসলাম দিদার বলেন, বছরের পর বছর একই ঘটনা ঘটছে। তারা ইউটিউবসহ অন্যান্য মাধ্যমে ভিডিও দিয়ে লাখ লাক টাকা ইনকাম করছে। অথচ আমরা যারা প্রযোজক আছি তারা কিছুই জানি না। কপিরাইট অফিসে আবেদন করেও আমরা কোনো উপকার পাচ্ছি না। কেননা কপিরাইট অফিসে একটা চক্র এই ধরনের কাজ করে প্রযোজকদের প্রতারিত করে লেবেল কোম্পানিগুলোকে সবধরনের সুযোগ সুবিধা দিয়ে থাকেন।
এমন ঘটনায় আর্থিকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছেন পরিচালক ও প্রযোজকরা। প্রযোজক সমিতির নেতা খোরশেদ আলম জানান, কপিরাইট নিবন্ধন অফিসের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী এই কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। অফিসে এক শ্রেণির কর্মচারীদের কারণে এসব সকল সত্ত্ব হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
কপিরাইট অফিসের দু’জন কর্মচারীর নামে বহু বছর ধরেই এমন অভিযোগ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কপিরাইট অফিসের এক কর্মচারী জানান জাল সনদসহ নানা ধরনের অবৈধ কাজের সাথে জড়িত কপিরাইট নিবন্ধন অফিসের দুই কর্মচারী শাহাজাহান ও গাফফার।
বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসের সাবেক রেজিস্টার জাফর রাজা চৌধুরী বলেন, ২০২১ সালে অফিসে কম্পিউটার মাউস ক্রয়ে নয়-ছয় চোখে পড়ে আমার। ১০ টি মাউসের দাম ৬০ হাজার টাকা দেখায় শাহজাহান। পরবর্তীতে একটি চিঠিও ইস্যু করি আমরা।
অভিযুক্ত আবদুল গাফফার ও শাহজাহানের দুর্নীতির তদন্তের জন্য দুই ভুক্তভোগী সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর তদন্তের আবেদন করেন। সংস্কৃতি সচিবের সাথে এ বিষয়ে টেলিফোনে কথা বললে তিনি জানান, অভিযোগের বিষয়টি তিনি অবগত তবে অভিযোগপত্রে নাম ঠিকানা দেয়া নেই এবং তা তদন্তাধীন।
সচিব খলিল আহমেদ বলেন, আমরা বিষয়টি অবগত। বিষয়টি তদন্তাধীন।
বিষয়টি জানতে কপিরাইট রেজিস্টার মো. দাউদ মিয়া এর সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান। অভিযুক্ত অপর দুইজনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। সরেজমিনে কপিরাইট অফিসে গেলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি।
Leave a Reply