বিনোদন প্রতিবেদক
ভায়োলেন্ট টেম্পার – একটি মানসিক রোগের নাম। এই রোগের বাংলা অর্থের সঙ্গে সবাই পরিচিত, রগচটা। রগচটা রোগীর সাধারণ উপসর্গ হলো – হুটহাট উত্তেজিত হওয়া, অল্প কথায় রাগ হওয়া, মানুষকে গালিগালাজ করা এবং রাগের বহিঃপ্রকাশ মানুষকে মারতে যাওয়া। এমনকী এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বারা তার পরিবার পরিজনও বকাবকি ও শারীরিকভাবে আক্রান্ত হন। আমাদের সমাজে ভায়োলেন্ট টেম্পার রোগী প্রচুর দেখা যায়। দেশের শিল্প – সংস্কৃতি অঙ্গনের সঙ্গে জড়িত অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত। এক্ষেত্রে চলচ্চিত্র নির্মাতা কাজী হায়াতের নাম উল্লেখ করা যায়। তার অনেক সহকর্মীর দাবি – তিনি নাকি অসম্ভব রকমের রগচটা মানুষ। ভায়োলেন্ট টেম্পার রোগীর সকল উপসর্গই নাকি প্রায় আশি ছুঁইছুঁই বয়সী এই বৃদ্ধ নির্মাতার স্বভাব – চরিত্রে বিদ্যমান। তিনি যেমন হুটহাট উত্তেজিত হন, মানুষের সঙ্গে উচুঁ গলায় গালিগালাজ মারমুখী আচরণ করেন। আবার মারধরও করেন।
খোঁজ নিয়ে কাজী হায়াতের অনেক সহকর্মীর কাজ থেকে জানা গেছে, ভায়োলেন্ট টেম্পার রোগে আক্রান্ত কাজী হায়াত যৌবন বয়স থেকে শুরু করে এই বৃদ্ধ বয়সেও প্রতিনিয়ত নিজের রোগের জানান দিয়ে যাচ্ছেন। দীর্ঘ চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে শুধু নিজের সহকর্মীই নন, প্রযোজক, অভিনয়শিল্পী এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় মারমুখী আচরণ করেছেন। তিনি এতোটাই শর্ট টেম্পার যে, একবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানস্থলেই তিনি সিনিয়র সাংবাদিক মাহমুদা চৌধুরীকে মারার জন্যে চড়াও হন। বাংলাদেশের জনপ্রিয় চিত্রসমালোচক মাহমুদা চৌধুরী নাকি বিশাল অন্যায় করে ফেলেছিলেন কাজী হায়াৎ নির্মিত একটি চলচ্চিত্রের সমালোচনা করায়। ওই সময় মাহমুদা চৌধুরী সাপ্তাহিক বিচিত্রায় নিয়মিত চিত্রসমালোচনা লিখতেন।
আরেকবার ২০০০ সালে সাভারের রাজফুলবাড়িয়ায় ডিপজলের ফাহিম শুটিং স্পটে ডিপজল প্রযোজিত একটি ছবির মহরতে ঢাকা থেকে চলচ্চিত্র সাংবাদিকরা সেখানে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে মানজমিন পত্রিকার সাংবাদিক রাকিব হাসান এর ওপর আকস্মিক চড়াও হন। উপস্থিত সাংবাদিকদের হস্তক্ষেপে কাজী হায়াৎ নিবৃত্ত হয়েও উচ্চস্বরে বলতে থাকেন, আমি কাজী হায়াত আছি বলেই তোমরা সাংবাদিকরা বউ বাচ্চাদের মুখে ভাত তুলে দিতে পারছো। তার এই ঔদ্ধত্য আচরণের পর সাংবাদিকরা ঢাকায় ফিরে এসে তাকে বয়কটের ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে বাচসাস এর তৎকালীন সভাপতি রফিকুজ্জামানসহ পুরো কমিটির কাছে কাজী হায়াৎ করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। বাচসাস এবং চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির যৌথ ওই সভাটি খোদ পরিচালক সমিতিতেই অনুষ্ঠিত হয়।
এই ঘটনার আট বছর পর ২০০৮ সালের শুরুতে সিনিয়র চলচ্চিত্র সাংবাদিক তুষার আদিত্য’র সঙ্গে মারমুখী আচরণ করেন। ওই ঘটনায় কাজী হায়াতের সহযোগী ছিলেন প্রয়াত তিনি পরিচালক চাষী নজরুল ইসলাম, আমজাদ হোসেন ও মোহাম্মদ হান্নান। এই চারজন চিত্রবাংলা পত্রিকার তৎকালীন প্রতিবেদক তুষার আদিত্য’র ওপর চড়াও হন তারই অফিস কম্পাউন্ডে। চার পরিচালকের সঙ্গে তুষার আদিত্য এবং তার অফিসের সিকিউরিটির লোকজনের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। অতঃপর ওই ঘটনায় কাজী হায়াত এবং প্রয়াত তিন পরিচালক হাত জোড় করে ক্ষমা চান। তারা যদি ক্ষমা না চাইতেন তাহলে ওই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা হতো বলে জানা যায়।
এতো গেলো তার সাংবাদিকদের সঙ্গে ঝামেলার ঘটনা। জানা গেছে, তিনি তার ছবির দুই নারী শিল্পীর গায়ে হাত তুলেও বিতর্কিত, সমালোচিত এবং তুমুল নিন্দিত – ঘৃণিত হয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাজী তার ছবির নায়িকা প্রসূন আজাদ এবং অপু বিশ্বাসের গায়ে হাত তুলেন। জানা যায়, এফডিসির অভ্যন্তরে একটি শুটিং ফ্লোরে অপু বিশ্বাসকে মারার সময় তিনি বলেন, মালাউন বেডি তোকে আমি তেজগাঁওয়ের শ্রমিক দিয়ে গ্যাং রেপ করাবো। ওই ঘটনায় অপু মামলা করতে চাইলে কাজী হায়াত তার কাছে মাফ চেয়ে ওই ঘটনা সামাল দেন।
বর্তমানে এসব ঘটনার অবতারণা করার মানে হলো-নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের কাজী হায়াত সম্পর্কে একটু ধারনা দেওয়া। বাংলাদেশী চলচ্চিত্রে অশ্লীল সংলাপ, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও ধর্ষণ দৃশ্যের জনক বলা হয় কাজী হায়াতকে। মূলত তার লেখনীর মাধ্যমেই দেশীয় চলচ্চিত্রে অশ্লীলতার শুভ সূচনা। তিনি নিজেও অনেকগুলো অশ্লীল ছবির নির্মাতা। যাই হোক, হৃদযন্ত্রের কয়েক বার চিকিৎসা করানোর পর ডাক্তার বৃদ্ধ কাজী হায়াতকে রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে বললেও তিনি সেটা মানেন না। সুযোগ পেলেই চিৎকার, চেঁচামেচি, মানুষকে মারতে যাওয়াসহ নানা অপকর্ম ঘটান বর্তমানে বেকার এই চিত্রনির্মাতা।
গেলো ডিসেম্বর কাজী হায়াতের পরিচালনায় সর্বশেষ জয়বাংলা নামের একটি ছবি মুক্তি পায়। বাপ্পি চৌধুরী এবং নতুন নায়িকা জাহারা মিতু অভিনীত ওই ছবিটি চরম ব্যর্থ হয়। সরকারি অনুদানের এই ছবিটি নির্মাণের সময় তিনি বাপ্পি এবং মিতুর সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করেছেন। শোনা যায়, তাদের পারিশ্রমিকের টাকাও নাকি তিনি মেরে দিয়েছেন। জানা গেছে, জয়বাংলা ছবিটি মুক্তির পর চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির নির্বাচনের আগে এটিএন বাংলার প্রযোজনায় একটি ছবি নির্মাণের মিথ্যা ঘোষণা দেন কাজী হায়াত। জানা গেছে, এই ছবিটি কাজী হায়াতের জীবদ্দশায় নির্মাণ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। যাই হোক, কাজী হায়াতের এই সব কর্মকাণ্ড যারা জানেন, তারা বলেন – ভায়োলেন্ট টেম্পার রোগী কাজী হায়াতের যেমন হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে মানুষকে মারতে যেতে সময় লাগে না, তেমনি শক্ত লোকের পাল্লায় পড়ে তার মুষ্টিবদ্ধ হাত নিমিষেই করজোড় হয়ে যায়। অর্থাৎ কাজী হায়াতের মতো মানুষরা হলেন এই সমাজের শক্তের ভক্ত, নরমের যম। এরা সামাজিক জীবনে বাহ্যিকভাবে সম্মানিত হলেও এদেরকে নিরবে মানুষজন অপছন্দ ও চরম ঘৃনা করেন।
Leave a Reply